সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাংকের অর্থে ‘টয়লেট নাটক’, নামমাত্র নির্মাণে কোটি টাকার হিসাব

নিজস্ব প্রতিনিধি
- আপডেট সময় : ০৭:৫৬:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (AIIB) অর্থায়নে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রকল্পে প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মাণে ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কাজ হচ্ছে নামমাত্র ১০-১২ হাজার টাকায়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে মোট ৩,৪৩৫টি ল্যাট্রিন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চলছে।
রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বাসিন্দা মেহেরাজ হোসেন বলেন, “এই টয়লেট এক বছরও টিকবে না। বৃষ্টি হলে যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।”
অন্যদিকে ধানুয়া গ্রামের সিএনজি চালক হানিফ জানান, “এক মাস আগে ফ্লোর ঢালাই করে চলে গেছে। এরপর আর কেউ আসেনি।”
নির্মাণ কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, প্রতিটি রিং বানাতে দেড়-দুই বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে প্রয়োজন হয় কমপক্ষে তিন বস্তা। ইটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের গুঁড়ো, যা টেকসই নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে ল্যাট্রিন বরাদ্দের তালিকায় নাম তোলার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এক ভুক্তভোগী জানান, তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে নাম তোলা হয়েছে।
রূপসা উত্তর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, রিংগুলো গাড়িতে উঠানোর সময়ই ভেঙে যায়। কাজের গুণগতমান একেবারে নিম্নমানের। এটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের লোকজনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে হচ্ছে।”
গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে কাজ পরিদর্শনে গিয়ে এনজিও প্রতিনিধিরাও অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ফ্যাসিলিটেটর তবারক হোসেন।
নির্মাণ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার জানান, তারা প্রতিটি টয়লেট নির্মাণ বাবদ সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা পাচ্ছেন, যার মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স ও অফিস খরচ অন্তর্ভুক্ত।
এই বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদ হোসেন বলেন, “কাজের গুণগতমান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে।” তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চাঁদপুর জেলার জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা মুহাম্মদ ফয়সালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের জেলা কো-অর্ডিনেটর আবু হুয়ারা প্রথমে এই প্রকল্প সম্পর্কে এড়িয়ে গেলেও পরে মুঠোফোনে বলেন, “এরকম একটি প্রকল্প চলছে, তবে এর বিস্তারিত সম্পর্কে আমি অবগত নই।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, শত শত কোটি টাকার এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব এবং স্থানীয় পর্যায়ের দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
