ফরিদগঞ্জে সরকারি হাসপাতালে বেলা দেড়টায় ১শ ৯৯ টাকাতেও মিলেনা চিকিৎসা সেবা
- আপডেট সময় : ০৪:২৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪ ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
সাত দিন জ্বর পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত ৫ বছরের ছেলে জিদনি কে নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসেন মোহাম্মদ রাব্বির মা-বাবা । জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে গিয়ে জিদনির অসুস্থতার কথা বললে, বৈকালিক চিকিৎসা সেবার জন্য ২শ টাকা দিয়ে সিরিয়াল দিতে বলেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অথচ তখন ঘড়িতে সময় বেলা ১টা ১৮ মিনিট। এসময় রোগীর স্বজনদের কাছে টাকা চাহিদার তুলনায় কম থাকায় ১০০ টাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য তারা কাতুতি-মিনতি করতে থাকেন, এতে মন গলেনি তাদের । সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় ১শ ৯৯ টাকা হলেও হবেনা।
অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে এক কক্ষ থেকে অপর কক্ষে ঘুরতে থাকেন শিশুটি মোহাম্মদ রাব্বির বাবা-মা । অথচ বেলা ৩টা থেকে বৈকালীক সেবা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল ৩ টা বাজার আগেই রোগীর লোকদেরকে বলা হয় ২শ টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য। অথচ যেকোন ধরণের জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ ঘন্টা জরুরী বিভাগে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক থাকেন। সে অনুযায়ী জরুরী বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেননি৷
চিকিৎসা খাতের প্রচলিত নিয়মের সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম চিত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেে। দুপুর ১টা পর্যন্ত বর্হিবিভাগে ৫ টাকায় টিকেটের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রচলিত নিয়ম থাকলেও তা কেবলমাত্র কাগজে কলমে। দুপুর ১টা না বাজতেই ৫ টাকা মূল্যের টিকেট কাউন্টার বন্ধ করে ২শত টাকা টিকেটের পসরা সাজিয়ে বসেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ । আগত রোগীদের সেবা নিতে বাধ্য করা হয় ২শত টাকা মূল্যের টিকেট কিনে। দুপুর ১টা না বাজতেই জরুরী বিভাগের ডাক্তার দ্বারা ২শ টাকা টিকেট মুল্যের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া এখন যেন হাসপাতালের চিরায়ত চিত্র। সরকারি হাসপালের এমন বাণিজ্যের কারণে সাধারণ চিকিৎসা সেবা গ্রহীতারা দিশেহারা অবস্থা। যারা মূলত টাকার অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে সরকারি হাসপাতাল আসেন। প্রতিদিনই ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরতদের নির্দেশে এভাবে টেবিল বসিয়ে টিকেটের পসরা সাজিয়ে বসেন।
৩১ ডিসেম্বর ১ টা ১৫ মিনিটে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখা মিলে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে হাসপাতালের মালি শংকর একটি টেবিলে বসে ২শ টাকা নিয়ে রোগীর সিরিয়ালের রিসিট কাটছেন। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে মহুর্তে টেবিল খালি করে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চলে যান মালি শংকর। বন্ধ হয়ে যায় সিরিয়ালের রিসিট কাটা। ততক্ষণে ৫ জনের সিরিয়াল কাটা হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হাতে আসে সিরিয়ালে নাম থাকা এক রোগীর বৈকালিক সেবা গ্রহণ করা এক রোগীর প্রেসক্রিপশন। তখন ঘড়িতে সময় দুপুর ১টা ১৮ মিনিট৷
এমন চিত্র দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মালি শংকর ও এমএলএস কহিনূর বেগম ২শত টাকা টিকেটের বিনিময়ে জরুরি বিভাগের রোগী দেখার বিষয়ে জানান , আমরা স্যারদের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করি,টিকেটের টাকা স্যারদের কাছে জমা দিয়ে দেই।
এদিকে সারাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈকালিক চিকিৎসা সেবা চালু করে। নির্দেশনা অনুযায়ী বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এমবিবিএস ২শত টাকা ও কনসালটেন্ডদের ৩শত টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ এদিন ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসা সেবা দিতে বিকাল ৩.৩০ পর্যন্ত কোন চিকিৎসককে দেখা যায়নি। এসময় হাসপাতাল ঘুরে প্রশাসনিক কক্ষসহ ডাক্তারদের চেম্বার তালাবন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। অথচ চিকিৎসা সেবা নিতে আগতদের ভীড় দেখা যায়।
নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে কথা হয় হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সাথে, তিনি জানান হাসপাতালের পাশ্ববর্তী কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা প্রতিনিয়ত সক্রিয় অবস্থানে থাকে হাসপাতাল চত্বরে এবং রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের ভুলবার বুজিয়ে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান মোটা অংকের টাকায় ডাক্তার দেখাতে কিংবা পরীক্ষা করাতে। এদিকে হাসপাতালে দালাল নিমূলে দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে।
স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, ডাক্তাররা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখিয়ে বিকেল ৩ টার পূর্বে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে থেকেই রোগীদের জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে দিয়েই ২শত টাকার বিনিময়ে বৈকালিক সেবা দেয়া হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই ২শত টাকার বিনিময়ে টিকেটের মাধ্যমে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেয়ার বিষয়ে এবং হাসপাতাল চত্ত্বরে দালালদের দৌরাত্মের বিষয়ে মুঠোফোনে জানার জন্য মেডিকেল অফিসার ডা. মোজাম্মেল হোসেন , স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক কেন লিখিত অভিযোগ দিবে এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, কোন ডকুমেন্ডস আছে? থাকলে ব্যবস্থা নিবো।