ফরিদগঞ্জ ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে মহিলা সমাবেশ ফরিদগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে এবার মহিলা দলের মানববন্ধন পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ফরিদগঞ্জে বিএনপি কর্মীদের টানা সড়ক অবরোধ মনোনয়ন বিতর্কে উত্তপ্ত ফরিদগঞ্জ, এনডিপির প্রেস ব্রিফিংয়ে তোলপাড় ফরিদগঞ্জ রাজনীতি ‘আমি রোহিঙ্গা হয়ে আসিনি, ফরিদগঞ্জেই আমার জন্ম’ – লায়ন হারুনুর রশিদ চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপির নেতৃত্ব সংকট ঘিরে অরাজকতা—এনডিপি চেয়ারম্যানের তীব্র সমালোচনা ফরিদগঞ্জে মাদক মামলা সাক্ষী হওয়ার খেসারত দিতে হলো এক যুবককে ইসলামী ব্যাংকে একচ্চত্র ও অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ বিমানবন্দর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী নেই, কার্যক্রম বন্ধ, তবু চলছে মাদ্রাসার নামে চাঁদা সংগ্রহ

ফরিদগঞ্জে শিক্ষার্থীর সাহসিকতার দৃষ্টান্ত 

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:০৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ ৫৩৬ বার পড়া হয়েছে
 আমার বয়স মাত্র ১৩। আমি বিয়ে করতে চাই না, আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমাকে বাঁচান, স্যার!”—এমন হৃদয়বিদারক আবেদন জানিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত দরখাস্ত জমা দিয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক স্কুলছাত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রুহি আক্তার (১৩) নিজের বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে নিজেই সাহস করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ শর্মার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন যেন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বিয়ে বন্ধ করা হয়।
দরখাস্তটিতে লেখা ছিল “আমার জন্ম ১৮/০৬/২০১২। আমি এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। আমার পরিবারের লোকজন জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি এই বিয়ে চাই না। আমি স্কুলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।”
রুহি আক্তার ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একই গ্রামের প্রবাসী আব্দুর রশিদের মেয়ে। শিশুকণ্ঠে এমন সাহসী প্রতিবাদে স্তম্ভিত স্কুলের শিক্ষকরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ শর্মা বলেন, “রুহির দরখাস্ত পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা তৎপর।”
ভুক্তভোগী রুহির মা সুমি বেগম জানান,
“বিয়ের বিষয়ে পরিবারে আলোচনা চলছিল, কিন্তু এখনও দিন তারিখ ঠিক হয়নি। তবে এখন আর বিয়ে দিব না। যদি কেউ মনে করে জোর করে বিয়ে দিচ্ছি, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিন।”
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে বলা হয়েছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন ও থানা একসঙ্গে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।”
রুহি আক্তারের মতো একটি ছোট মেয়ের সাহসিকতা প্রমাণ করে—একটি শিক্ষিত সমাজই পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। প্রশাসন, বিদ্যালয়, এবং সমাজ একযোগে এগিয়ে এলে বাল্যবিয়ের মতো অভিশাপ সমাজ থেকে নির্মূল করাও সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফরিদগঞ্জে শিক্ষার্থীর সাহসিকতার দৃষ্টান্ত 

আপডেট সময় : ০৬:০৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
 আমার বয়স মাত্র ১৩। আমি বিয়ে করতে চাই না, আমি পড়াশোনা করতে চাই। আমাকে বাঁচান, স্যার!”—এমন হৃদয়বিদারক আবেদন জানিয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত দরখাস্ত জমা দিয়েছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার এক স্কুলছাত্রী।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রুহি আক্তার (১৩) নিজের বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে নিজেই সাহস করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ শর্মার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন যেন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বিয়ে বন্ধ করা হয়।
দরখাস্তটিতে লেখা ছিল “আমার জন্ম ১৮/০৬/২০১২। আমি এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। আমার পরিবারের লোকজন জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি এই বিয়ে চাই না। আমি স্কুলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।”
রুহি আক্তার ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একই গ্রামের প্রবাসী আব্দুর রশিদের মেয়ে। শিশুকণ্ঠে এমন সাহসী প্রতিবাদে স্তম্ভিত স্কুলের শিক্ষকরা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পংকজ শর্মা বলেন, “রুহির দরখাস্ত পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা তৎপর।”
ভুক্তভোগী রুহির মা সুমি বেগম জানান,
“বিয়ের বিষয়ে পরিবারে আলোচনা চলছিল, কিন্তু এখনও দিন তারিখ ঠিক হয়নি। তবে এখন আর বিয়ে দিব না। যদি কেউ মনে করে জোর করে বিয়ে দিচ্ছি, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিন।”
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে বলা হয়েছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন ও থানা একসঙ্গে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।”
রুহি আক্তারের মতো একটি ছোট মেয়ের সাহসিকতা প্রমাণ করে—একটি শিক্ষিত সমাজই পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। প্রশাসন, বিদ্যালয়, এবং সমাজ একযোগে এগিয়ে এলে বাল্যবিয়ের মতো অভিশাপ সমাজ থেকে নির্মূল করাও সম্ভব।