ফরিদগঞ্জ ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে মহিলা সমাবেশ ফরিদগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে এবার মহিলা দলের মানববন্ধন পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ফরিদগঞ্জে বিএনপি কর্মীদের টানা সড়ক অবরোধ মনোনয়ন বিতর্কে উত্তপ্ত ফরিদগঞ্জ, এনডিপির প্রেস ব্রিফিংয়ে তোলপাড় ফরিদগঞ্জ রাজনীতি ‘আমি রোহিঙ্গা হয়ে আসিনি, ফরিদগঞ্জেই আমার জন্ম’ – লায়ন হারুনুর রশিদ চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপির নেতৃত্ব সংকট ঘিরে অরাজকতা—এনডিপি চেয়ারম্যানের তীব্র সমালোচনা ফরিদগঞ্জে মাদক মামলা সাক্ষী হওয়ার খেসারত দিতে হলো এক যুবককে ইসলামী ব্যাংকে একচ্চত্র ও অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ বিমানবন্দর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী নেই, কার্যক্রম বন্ধ, তবু চলছে মাদ্রাসার নামে চাঁদা সংগ্রহ

ফরিদগঞ্জে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা

শামীম হাসান
  • আপডেট সময় : ০৮:২৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫ ৩৭৭ বার পড়া হয়েছে

 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ও চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক বেসরকারি হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট ২০২৫) সকালে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও পুলিশকে সহযোগিতা করেন।

জানা গেছে, পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের ইসহাক মিয়ার স্ত্রী কহিনুর বেগম (৬৫) বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিবারের দাবি, ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তারা বারবার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সাদেককে রোগী দেখার অনুরোধ করলেও তিনি আসেননি।

শুক্রবার সকালে কহিনুর বেগমের মৃত্যু হলে স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে, এমনকি রোগীকে অন্যত্র নিতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে স্বজনদের কয়েকজনের গায়েও হাত তোলা হয় বলে দাবি করেন তারা। ক্ষুব্ধ স্বজন ও স্থানীয় কিছু লোকজন তখন হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এতে হাসপাতালে থাকা অন্যান্য রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

মেয়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকা রামপুরের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, “সকালে নাস্তার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, কয়েকজন ভাঙচুর করছে। আমি আমার মেয়ের কেবিনে এসে তাদের অনুরোধ করে ভাঙচুর থেকে বিরত করি।”

অভিযোগ অস্বীকার করে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন বলেন, “রোগীকে আমি একাধিকবার দেখেছি। কিডনি সমস্যার কারণে প্রস্রাব হচ্ছিল না, ব্লাড সুগার লেভেলও কম ছিল। আমরা ভোরে তাদেরকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সকালেই রোগী মারা যান। চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়নি।”

হাসপাতালের অন্যতম মালিক ডা. সাদেকুর রহমান বলেন,
“রোগীর মৃত্যুর কথা শুনে আমি হাসপাতালে আসি। স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কাউকে আটকাইনি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকই তাদেরকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমাদের হাসপাতালে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”

ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব চক্রবর্তী জানান, “রোগীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় সাবেক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারাও সহযোগিতা করেছেন।”

রোগী মৃত্যু ও পরবর্তী ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে স্বজনদের অভিযোগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি—দুটিই একে অপরের বিপরীত। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ফরিদগঞ্জে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা

আপডেট সময় : ০৮:২৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

 

চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ও চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক বেসরকারি হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট ২০২৫) সকালে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও পুলিশকে সহযোগিতা করেন।

জানা গেছে, পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের ইসহাক মিয়ার স্ত্রী কহিনুর বেগম (৬৫) বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিক সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিবারের দাবি, ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তারা বারবার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সাদেককে রোগী দেখার অনুরোধ করলেও তিনি আসেননি।

শুক্রবার সকালে কহিনুর বেগমের মৃত্যু হলে স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে, এমনকি রোগীকে অন্যত্র নিতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে স্বজনদের কয়েকজনের গায়েও হাত তোলা হয় বলে দাবি করেন তারা। ক্ষুব্ধ স্বজন ও স্থানীয় কিছু লোকজন তখন হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এতে হাসপাতালে থাকা অন্যান্য রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

মেয়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকা রামপুরের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, “সকালে নাস্তার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, কয়েকজন ভাঙচুর করছে। আমি আমার মেয়ের কেবিনে এসে তাদের অনুরোধ করে ভাঙচুর থেকে বিরত করি।”

অভিযোগ অস্বীকার করে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হুমায়ুন বলেন, “রোগীকে আমি একাধিকবার দেখেছি। কিডনি সমস্যার কারণে প্রস্রাব হচ্ছিল না, ব্লাড সুগার লেভেলও কম ছিল। আমরা ভোরে তাদেরকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সকালেই রোগী মারা যান। চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়নি।”

হাসপাতালের অন্যতম মালিক ডা. সাদেকুর রহমান বলেন,
“রোগীর মৃত্যুর কথা শুনে আমি হাসপাতালে আসি। স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কাউকে আটকাইনি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকই তাদেরকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমাদের হাসপাতালে যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”

ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব চক্রবর্তী জানান, “রোগীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় সাবেক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারাও সহযোগিতা করেছেন।”

রোগী মৃত্যু ও পরবর্তী ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে স্বজনদের অভিযোগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি—দুটিই একে অপরের বিপরীত। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।