ফরিদগঞ্জে গৃহবধূ আসমার মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি
- আপডেট সময় : ০৫:৫০:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
ফরিদগঞ্জে আসমা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গৃহবধূর স্বামীর পরিবার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কথা বললেও মরদেহ গোসলের সময় মৃতের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন নির্যাতন এবং খুনের ইঙ্গিত বহন করে বলে জানিয়েছেন আসমা নামের ওই গৃৃহবধূর স্বজনরা। এদিকে ঘটনার পর থেকে আসমার দুুই দেবর পলাতক রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে সুরতহাল রির্পোটের সময় শরীরের অস্বাভাবিক কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। এদিকে লাশ পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর ওই গৃহবধূর দুই দেবর সাইমুন ও শাহীন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চির্কা গ্রামের রাঢ়ি বাড়ির হানিফ রাঢ়ির ছেলে মাসুমের সাথে চরমথুরা গ্রামের হাফেজ খানের মেয়ে আসমার ইসলামী শরিয়াহ মতে গত প্রায় ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ১৮ মাস বয়সী আয়ান নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে আসমার স্বামী মাসুুম মালেয়শিয়াতে থাকলেও তার শ্বশুড়-শাশুড়ি ও দুই দেবর সাইমুন (২২) ও শাহীন(১৭)সহ একসাথে একঘরেই থাকতেন।
সরেজমিন গেলে আসমার বড় ভাবী ফাতেমা বেগম জানান, তার ননদ আসমার লাশের পোস্ট মর্টেমের পর লাশের গোসল করানোর সময় তার শরীরের স্পর্শকাতর কয়েকটি স্থানে কামড়ের চিহ্ন দেখতে পাই। অথচ আমাদেরকে বলা হয়েছিল সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। আমরা কিছু ছবি তুলে রেখেছি। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন নিশ্চিত করে তাকে যৌন ও শারিরিক নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ আম গাছে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়।
আসমার লাশের গোসলের সময় উপস্থিত থাকা মিনু আক্তার জানান, তিনিও দেখেছেন আসমার গোপন স্থানে তাজা আঘাতের চিহ্ন। আঘাতের চিহ্নগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির বলে মনে হয়। লাশের নিয়মিত গোসল দেয়া লতুফা বেগম জানান, আমি এই পর্যন্ত ৫০টির উপর লাশের গোসল দিয়েছি। শনিবার দিনও দুইটি লাশের গোসল করিয়েছি। আসমার লাশের গোসলের সময় তার গোপন কয়েকটি স্থানে তাজা রক্তের দাগের মতো দেখেছি।
আসমার বান্ধবী ফাবিয়া জাহান, আসমা তার ঘনিষ্ট বান্ধবী। তার কাছে শশুড় বাড়ি নির্যাতনের কথা ইতিপুর্বে তাকে জানিয়েছে। চরমথুরা খান বাড়ির মোশারফ খানের স্ত্রী ও আসমার সম্পর্কে ভাবী রিয়া বেগম জানান, আসমা শনিবার রাত ১২টার পর আমার মুঠো ফোনে কল করে আমার সাথে কথা বলেছে। এই সময় সে কান্নাকাটি করে বলেছে তার শরীর ভাল নেই। এরপর ইমুতেও আমাকে ম্যাসেজ দেয়। আসমার কথা শুনে মনে হয়েছে তার উপর অত্যাচার হয়েছে। ভোর বেলা শুনতে পাই সে মারা গেছে। আসমার ভাই রুবেল খান জানান, রাতে আমার বোন আমাকে তিন বার কল দিয়েছিল। কিন্তু ঘুমে থাকার জন্য ধরতে পারি নি। ভোর রাতে বোনের স্বামীর বাড়ির লোকজন আসমা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে আমাকে জানায়। আমি দ্রুত তাদের বাড়িতে ছুটে গিয়ে দেখি আসমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আমিও গিয়েছি তাদের সাথে, ডাক্তার আমার বোনকে মৃত ঘোষণা করেছে। আমি মনে করি আমার বোনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছি। আমি বিচার বিভাগের কাছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবী করছি।
আসমার শশুড় বাড়িতে গিয়ে লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তারা কেউই আসমাকে গাছ থেকে নামাতে দেখেনি।
আসমার শশুড় হানিফ রাঢ়ী জানান, তিনি শনিবার রাতে আনুমানিক ৪ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠলে ঘরের পাশের আম গাছে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পেলেন। এসময় তার দুই ছেলে প্রথমে ছুটে এসে আসমাকে ঘরে নিয়ে আসেন। পরবর্তিতে বাড়ির বাসিন্দা সাবুসহ কয়েকজন ছুটে আসে।
তবে বাড়ির বাসিন্দা সাবুর বক্তব্যের জন্য গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। আসমার শাশুড়ি মাছুমা বেগম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আসমাসহ পরিবারের অন্যরা শনিবার (২ নভেম্বর) রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোররাতে আসমার শ্বশুর (আমার স্বামী) হানিফ রাঢ়ি বাথরুমে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলে ঘরের পাশের আম গাছের সাথে আসমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে আসমাকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় নামিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
তিনি আরো জানান, আমার ছেলে সাইমুন ঘরের ভিতরের একটি কক্ষে, আমার সাথে নাতিসহ আসমা পাশের একটি কক্ষে ঘুমায়। রাতে আসমা ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে ফোনে কথা বলতো। কার সাথে কথা বলতো আমরা জানি না। জিজ্ঞাসা করলে বলতো আমার ছেলের সাথে কথা বলে। আসমার পরিবারের সাথে ইতোপূর্বে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। আসমার একটি মোবাইল তার ছেলে সাইমন ভেঙ্গে ফেলছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। এই ঘটনার পরথেকে তার দুই ছেলে সাইমুন ও শাহীন বাড়িতে নেই বলে তিনি স্বীকার করেন।
এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, আসমার মরদেহ সুরতহাল করার সময়ে আমার সঙ্গীয় নারী পুলিশ সদস্যসহ অন্যরা আসমার শরীরের কিছু লালচে চিহ্ন থাকার কথা জানান। আমি এগুলো সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হানিফ সরকার বলেন, সংবাদ পেয়ে আসমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়েছে। থানায় জিডি হলেও ময়না তদন্ত রির্পোট সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।