ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেদম বেত্রাঘাতের অভিযোগ ।। অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক
- আপডেট সময় : ০২:৫৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে
শামীম হাসান ।। ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়ায় একটি মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেদম বেত্রাঘাতের অভিযোগ উঠেছে৷
৭ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) গৃদকালিন্দিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গনিত বিষয়ের শিক্ষক নাছির উদ্দিন কতৃক নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এমন লাঞ্চনায় অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তামিমা আক্তার, তানজিন লিজা, মিতু আক্তার, মাহিয়া আক্তার, ফারজানা আক্তার, ফাইজা আক্তার, তাসফিয়া সাবা অরিন সহ বেত্রাঘাতের শিকার হয়েছেন বিশ থেকে ত্রিশজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে পড়েছেন।
ঘটনার পরবর্তীতে যখনই অভিভাবকরা বিষয়টি জানতে পারলে তখনই শুরু অভিযুক্ত শিক্ষাক নাছির উদ্দিনেের অহেতুক কারণ দেখিয়ে ছুটি নামক চোর পুলিশ খেলা।
খবর পেয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারী স্কুলটিতে ছুটে যায় কয়েকজন সংবাদকর্মী। স্কুলে গিয়েই দেখা যায় প্রধান শিক্ষক আমেনা বেগম স্কুলে নেই এমনকি স্কুলে নেই অভিযুক্ত সেই শিক্ষক নাসির উদ্দিন। শিক্ষক মিলনায়তে দেখা মিলে সহকারী প্রধান শিক্ষিকার, কথা হয় তার সাথে। শুরুতে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রিতা রাণী দেবী এ বিষয়ে কোন কিছু জানেন না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কথোপকথনের এক পর্যায়ে তিনি শিকার করেন ৯ ফেব্রুয়ারী সকালে দু-জন অভিভাবকের মাধ্যমে তিনি বিষটি অবগত হয়েছে৷ এদিকে অভিযুক্ত নাছির উদ্দিন কেন স্কুলে নেই এমন প্রশ্ন করতেই তার প্রতি উত্তরে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা জানান উনি ছুটিতে আছেন। কি কারনে ছুটি? কার কাছে ছুটি নিয়েছে? ছুটির বিষয়ে লিখিত কোন তথ্য আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে এসব বিষয় প্রধান শিক্ষক জানে, উনি স্কুলের সব করেন, আমার কাজ গ্যাফ ক্লাসের রুটিন তৈরি করা আমি তাই করতেছি।
এরপর মুঠোফোনে কথা হয় প্রধান শিক্ষিকা আমেনা বেগমের সাথে, শুরুতে স্কুলের কাজে তিনি কুমিল্লায় আছেন বলে জানান, শিক্ষার্থীদের উপর বেদম প্রহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, ঘটনার দিন রাতেই আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি, এরপর আমি ওই শিক্ষককে ডেকে কথা বলেছি এবং কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তার কারন জানতে চেয়েছি। আমি স্কুলের বাহিরে থাকায় এখন কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। আমি কুমিল্লা থেকে ফিরে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো। প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য অনু্যায়ী ঘটনা যে ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়ার পর, কথা হয় নবম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে, এমনকি তারা শিকার করেন যে শিক্ষক নাছির উদ্দিন শ্রেণীকক্ষে নির্মম ভাবে বেত্রাঘাত করেছেন।
শিক্ষার্থীদের নির্মম ভাবে বেত্রাঘাত করার এ বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয় অভিযুক্ত শিক্ষক নাসির উদ্দিনের সাথে, শুরুতে দু-বার তার মুঠোফোনে কল ডুকলেও এর তিনি মোবাইল বন্ধ করে রাখেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের মতামত জানার জন্য একাধিক অন্য নাম্বার থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয় অভিযুক্ত নাসির উদ্দিনের সাথে, সব চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে ছুটে যাওয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষক নাসির উদ্দিনের বাড়িতে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরের চার পাশের করা টিনের বাউন্ডারির প্রবেশ পথের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, একাধিকবার দরজায় নক করা হলেও ভেতর থেকে কোন প্রকার সাড়া না দেয়ায় বিশেষ চেষ্টায় ঘরের মূল দরজাতে তালা যে তালা নেই তারমানে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন বাড়িতেই আছেন তা নিশ্চিত হওয়ার পর ফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সংবাদকর্মীরা।
ঘটনার পরবর্তী সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের ছুটির নামে পালিয়ে বেড়ানোর ঘটনা, গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে যোগাযোগ না করে গা ঢাকা দেয়ার বিষয়টি প্রমান কিসের ইঙ্গিত দেয়।
ঘটনার শুরু কি থেকে কিংবা কেনই বা শিক্ষার্থীদের উপর এমন বেদম প্রহার সে কারন জানতে ফের ছুটে যায় স্কুলে, স্কুলে গিয়ে নবম শ্রেণীর কয়েজকন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় সংবাদকর্মীদের। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওইদিন গনিতের ক্লাসে অংক করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের এমন বেত্রাঘাত করা হয়েছে, শুধুই কি ক্লাসে অংক না পারার কারনেই এতটা আঘাত করা হয়েছে তা জানতে চাওয়ায় শিক্ষার্থীরা যে ভয়ংকর তথ্যটি দেয় তা হলো, মূলত অভিযুক্ত নাসির উদ্দিনের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারনে অন্যত্র প্রাইভেট পড়ায় ক্লাসে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় ক্লাসে তাদের এবং সেদিন অংক না পারার কারন দেখিয়ে ক্লাসের অন্য কজনকে মারা হলেও অন্যত্র পড়া শিক্ষার্থীদের বেদম ভাবে মেরেছেন, যে মারার মাত্রা এতটা খারাপ ছিলো যে, বেত্রাঘাতের পর দুইদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের হাতে বেত্রাঘাতের দাগ স্পষ্ট এবং আঘাতকৃত স্থানে রক্ত জমাট বেধে আছে স্পর্শ। স্কুলটির শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় চোখ পড়লে চোখে পড়ে সবশেষ ৭ তারিখ শিক্ষক স্বাক্ষর সীটে তার স্বাক্ষর রয়েছে তার পরের দুইদিন স্বাক্ষর সীটে স্বাক্ষর নেই তার। অথাৎ তাতেও অনিয়ম কারন সহকারী প্রধান শিক্ষকের দাবি ঘটনার পরের দিন তিনি স্কুলে এসেছে অথচ শিক্ষক স্বাক্ষর সীটে সেদিনে নেই ওই শিক্ষকের স্বাক্ষর।
তথ্যনুসন্ধানে এবার কথা হয় বেদম ভাবে বেত্রাঘাতের শিকার হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে, তামিমা তানজিন লিজার মা জোসনা আক্তার এবং তাসফিয়া সাবা অরিন এর মা নীলা বেগম এই সংবাদকর্মীকে জানান, আমাদের মেয়েরা ওনার কাছে না পড়ে অন্যত্র পড়ে বিদায় পূর্বেও ওই শিক্ষক অনেক তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। আমাদের বাচ্চারা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে ইচ্ছে পোষন করলে, ওই সকল শিক্ষার্থীরা কিছু পারে না আরো ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলে তাতেও হস্তক্ষেপ করেন অভিযুক্ত এই শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে দুই/তিন দিন হলো এর মধ্যে বছরের এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বই না থাকায় যথা নিয়মে ক্লাসও হয় না। যেখানে ভালো করে ক্লাসে পাঁচ-সাতদিই হয়নি সেখানে অংক না পারার কারন দেখিয়ে এভাবে কেন মেরেছেন ওই শিক্ষক।
কয়েজন শিক্ষার্থী এই প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষার্থীদের এমন লাঞ্চনার পর ওই সকল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ৯ ফেব্রুয়ারী স্কুলে আসতে বলা হয়। অথচ ঘটনার কিছুটা উত্তাপ ছড়ালে অভিভাবকদের স্কুলে আসতে বলার দিনেই কোন এক অদৃশ্য কারনে ছুটি নিলেন ওই শিক্ষক। তবে প্রশ্ন তৈরি হয় যদি ওই শিক্ষক ৯ ই ফেব্রুয়ারি স্কুলে আসার কথা বলেছিলেনই, তবে কেন সেদিন তিনি কেন স্কুলে নেই?
এদিকে যেখানে সরকারী বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের বেত ব্যবহার বিধি নিষেধ রয়েছে সেখানে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন বেদম ভাবে বেত্রাঘাত করেই খান্ত হননি বরং ওইসব শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সচেতন অভিভাবক ও স্থানীদের মাঝে ব্যাপক ভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেন। এই স্কুলেই আর পড়বো না এমন মনোস্থীর করার মত তথ্য জানায় কয়েকজন শিক্ষার্থী।
অভিভাবকগণের অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জিএস তসলিম আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষককের বেত্রাঘাতের কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আশাকরি কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি, ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছি প্রধান শিক্ষককে।