প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ের খবর পেয়ে প্রেমিকার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা
- আপডেট সময় : ০১:০১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩ ১২৪৪ বার পড়া হয়েছে
প্রবাসী প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ের খবর পেয়ে নানার বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করছে ফরিদগঞ্জের এক কলেজ ছাত্রী।
প্রবাসী প্রেমিক আহসান সজীব এর অন্যত্র বিয়ের সংবাদ পেয়ে রবিবার (৩০ জুলাই) উপজেলার ১৫ নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রূপসা বেপারী বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ’র ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী স্বর্ণালী আক্তার (১৮)।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, একই উপজেলার ১৪ নং ইউনিয়নের কালির বাজারের আহসান সজীব নামক যুবকের সাথে ২০২১ সালে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে উঠে স্বর্ণালী আক্তারের। সম্পর্কে গড়ে উঠার কয়েকদিনের ব্যবধানে জীবিকার তাগিয়ে সৌদিআরবে পাড়ি জমান প্রেমিক আহসান সজীব।
স্বর্ণালীর সহপাঠীরা জানান, তাদের সম্পর্কের এক পর্যায়ে প্রেমিক আহসান সজীব এর পরিবারে প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হলে, প্রেমিক আহসান নিজে স্বার্ণলীকে জানান তার পরিবার তাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে না ও তার বান্ধবীদেরকে দিয়েও বুঝানোর চেষ্টা করেন, স্বর্ণালী বিষয়টি মেনে না নিয়ে তার পর থেকে প্রেমিক আহসান সজীবকে কয়েকবার হুমকিও দিয়েছিলো। সময়ের পালাবদলে মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক টিকে ছিলো । প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার পর থেকে নানা সময়ে স্বর্ণালী ও আহসান সজীব’র নানা বিষয় নিয়ে খুনসুটি লেগেই থাকতো। এর আগে মনমালিন্যের কারনে স্বর্ণালী কয়েকবার ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটেছেন এবং আত্মহত্যা করারও চেষ্টাও করেছেন৷ সবশেষ শনিবার (২৯ জুলাই) রাতে ম্যাসেঞ্জারে প্রেমিক আহসান সজীব’র পাঠানো এক বার্তায় তার বিয়ে করার খবর জানানোর পর পুরোপুরি মানুসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে স্বর্ণালী। এমন খবর পেয়ে পাশ্ববর্তী বাড়ির সহপাঠীরা পর দিন রবিবার (৩০ জুলাই) স্বর্ণালীর বাড়িতে গিয়ে কলেজের জন্য রেডি করে প্রতিদিনের মতো তাড়া একসাথে কলেজে যান, কলেজে গিয়ে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত রেজিষ্ট্রেশন ফর্মে স্বাক্ষর দেয়া হলে স্বর্ণালী অন্য বান্ধবীদের না জানিয়ে বাড়ি চলে যান এবং নানার বাড়ির ছোট মামা সাখাওয়াত হোসেন কবির’র ঘরের একটি কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে স্বর্ণালী নামের ওই কলেজ ছাত্রী। ম্যাসেঞ্জারে প্রেমিক আহসান সজীব যে ম্যাসেজের জেড় ধরে আত্মহত্যা করে স্বর্ণালী তা হলো “আমার ভাইয়া আমার জন্য মেয়ে ঠিক করে ফোন দিছে সব কিছু রেডি ছিলো, আম্মুও ঐখানে ছিলো। আম্মু কসম দিছে বিয়ে না করলে আর তোমার সাথে কথা বললে আম্মু সুইসাইড করবো। আমার কিছু করার ছিলো না আর। তুমি আমারে মাফ করে দিও, প্লিজ। আমি তোমার হয়ে থাকতে পারি নাই ”
প্রতিদন এক সাথে কলেজ যাওয়া আসা করা পাশ্ববর্তী বাড়ির স্বর্ণালী’র কয়েকজন সহপাঠীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আজও স্বর্ণালী কলেজে গিয়েছে, আমাদের পরীক্ষা বিষয়ক স্বাক্ষর দেয়া শেষ হলে কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য কলেজের হল রুমে আমরা পরীক্ষার্থীদের একাংশ যাই। কিন্তু স্বর্ণালী আমাদের সাথে না গিয়ে ক্লাস রুমেই বসে ছিলো পরে আলোচনা শেষে ক্লাসে এসে দেখি সে নেই, কিছুক্ষণ পরই আবার খবর শুনি সে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং এর পর তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে দেখি স্বর্ণালীর মৃত দেহ সিলিং ফ্যানের সাথে জুলে আছে। স্বর্ণালীর এমন মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তার স্মৃতিগুলো এখনো যেন চোখের সামনে ভাসছে। এই তো সকালে সে সহ আমারা এক সাথে কলেজ গিয়েছিলাম।
স্বর্ণালী’র নানার বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবার বাড়ি দায়ছারা মোল্লা বাড়িতেই স্বর্ণালী ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে উঠে এবং প্রাথমিকের পড়া-শোনা সেখানেই শেষ করে। পরে প্রবাসী বাবা আক্তার হোসেন প্রবাসে থাকা অবস্থায় কিডনিজনিতে রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং চিকিৎসারত অবস্থায় বাবা মৃত্যুবরণ করেন। বাবা আক্তার হোসেন এর মৃত্যুর পর পরিবারের এক মাত্র সন্তান স্বর্ণালী তার নানার বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছেন ভর্তি হয়েছেন নানার বাড়ির পাশ্ববর্তী স্কুল রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ও হাইস্কুলের গন্ডি পেরোনোর পর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে। মা তাসলিমা বেগম ও নানী হোসনেয়ারাসহ ছোট মামা সাখাওয়াত হোসেন কবির’র ঘরে মামা-মামীর সাথেই থাকতো স্বর্ণালী। সাম্প্রতি সময়ে স্বর্ণালীর বাবার বাড়িতে তার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর বিল্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ শেষ হলেই সেখানে চলে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জীবিত থেকে আর ফিরে যাওয়া হলো না পৈত্রিক বিটায়, তার আগেই পরোপারে পাড়ি জমালো কলেজ ছাত্রী স্বর্ণালী আক্তার। ফাঁস দিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় স্বর্ণালীর নানা বাড়িতে শোকের মাতম বইছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তিতে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে
ওই সব ছেলেদের কখনো বিচার হবে না। প্রেম করে নিজের ইচ্ছাতে তখন পরিবারে কথা মনে থাকে না। আর যখন বিয়ের জন্য বলা হয় তখন তাদের পরিবার মানবে না। তাহলে ভালোবাসতে আসো কেনো ভাই।